১২সে রাহু
উন্নতি আপনার গৃহের বাইরে, যেখানে জন্ম গ্রহন করেছেন সেখান থেকে অনেক দূরে অপেখ্যা করছে আপনার প্রতিষ্টা।
সম্ভব হলে কুন্ডলী মিলিয়ে দেখে নেবেন, এমন উদাহরণ আমি শত শত দিতে পারি।
●Sir Issac Newton
● Neil Armstrong
● Marilyn Monitor
● Nelson Mandela
● Nargis
● Goutam Budha
● sardar Ballav bhai patel
● Steven Spilbarg
● Uttam Kumar
● Vivekananda
এদের যেকোনো একজনের জীবনী দেখতে পারেন, জন্মানোর পরে জন্মস্থান ছেড়ে বাড়িয়ে আস্তে হয়েছিলো, এবং দূরে কোনো জায়গায় তাদের জগৎ বিখ্যাত উন্নতি ঘটেছিলো।
আজকে আপনাদের ভিমসেন যোশী জির অজানা গল্প বলি।
গুরুর খোঁজে ঘর ছেড়ে ভীমসেন যখন এক পথে নামলেন, তখন মাত্র ১১ বছর। তাঁকে গুরুর জন্য আকুল করে তুললো, পথে টেনে আনলো একটা রেকর্ড, দুটো গান, দুটো রাগ, আর এক ওস্তাদের গায়কী। ওস্তাদের নাম আব্দুল করিম খাঁ সাহেব। ঝিঁঝিট রাগে গাওয়া “পিয়া বিন নেহি আবত চ্যান” আর বসন্ত রাগে গাওয়া “ফাগুয়া ব্রিজ দেখেনকো”- এই গান দুটিতে খাঁ সাহেবের গায়ন শৈল বালক ভিমসেনের হৃদয়ে ঢেউ জাগাল, তাকে আকুল করে তুলল। এই তো সেই গান, এরকম গানই তো গাইতে চান। কিন্তু কে শেখাবে তাকে এমন করে? গুরু কই? নিজের শহরে এমন কেউ আছেন বলে শোনেননি।
এরকম যখন অবস্থা, তখন কার কাছে যান একদিন শুনলেন গালিওরের মহারাজার “মাধব সংগীত বিদ্যালয়ের কথা। সেখানে নাকি অনেক বড়ো বড়ো ওস্তাদ পন্ডিত আছেন। কিন্তু সে যে অনেক দূরের পথ, সবটাই অজানা। তবু মনে একবার আশা জাগে, কোনোমতে সেখানে পৌঁছাতে পারলে , একটা না একটা ব্যাবস্থা হয়ে যাবে। এই আশাটুকু সম্বল করেই মায়ের সঙ্গে অভিমানের ছুতোয় ঘর ছাড়লেন ভীমসেন। পকেটে একটা পয়সাও নেই। তাই টিকিট কেন গেল না। বিনা টিকিট তেই উঠে বসলেন ট্রেনে। সামনে গোয়ালিওর যাত্রাপথ, পাথেয় শুধু সঙ্গীত। গান শুনিয়ে সহযাত্রীদের কাছ থেকে খাবার জুটলেও পদে পদে পড়তে লাগলেন সঙ্গীত রসিক এবং সংগীতবেরোসিক টিকিট চেকারের পাল্লায়। গান শুনে রসিক টি টি সি যাবার অনুমতি দেন তো, বেরসিক টি টি সি যাবার অনুমতি দেন না, স্টেশনে নামিয়ে দেন। তখন আবার অন্য গাড়ির অপেখ্যা। এভাবেই নামতে নামতে উঠতে উঠতে গোয়ালিওর পৌঁছাতে মাস গড়িয়ে গেল। দক্ষিণ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে ভীমসেনের হাতেখড়ি হয়েছিল বাড়িতেই। মায়ের কাছে ভোজন শিখেছিলেন। তাই মহারাজের বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে কোনো অসুবিধা হলনা। কিন্তু বিদ্যালয়ে তিনি যা চান তা পাচ্ছিলেন না। মনে যখন তার অতৃপ্তিতে ভরে উঠেছিল ঠিক তখনই আলাপ হলো উস্তাদ হাফিজ আলী খান সাহেবের সাথে।
মহারাজের স্কুলের ছাত্রদের প্রতিদিন দুপুরে ফ্রীতে খাওয়ানো হত। শুধু সেই দুপুরের খাবার টুকু খেয়েই সারাদিন রেওয়াজ করে সন্ধ্যাবেলা ভীমসেন যেতেন হাফিজ আলী খান সাহেবের রাগ, পুরিয়া আর মারোয়া শিখে ফেললেন কিন্তু ব্যস্ত খান সাহেব সময় দিতে পারছিলেন না। তাই ভীমসেনকে আবার পথে বেরুতে হলো গুরুর খোঁজে। এলেন কলকাতায়।
কলকাতায় তো এলেন কিন্তু কোথায় গুরুর খোঁজ করবেন? এদিকে খাবার বলতে কোলের জল, ঘর বলতে ফুটপাথ, পকেট গরের মাঠ। এভাবে আর কতদিন পাড়া যায়। খিদের জ্বালা সইতে না পেরে যা হোক একটা কাজ চেয়ে দোরে দোরে ঘুরতে লাগলেন। চেয়ে চিনতে খাবার হয়তো পেলেন কিন্তু একটা উটকো ছেলেকে কাজ কে দেবে। শেষে হতাশ হয়ে এসে পড়লেন পাহাড়ী সন্যালের বাড়িতে। ছেলেটির করুন অবস্থা শুনে পাহাড়ী সান্যাল কাজ দিলেন। কিন্তু গুরু পেলেন না
আবার পথে নামলেন, পথ নিয়ে গেল জলন্ধর। সেকশনে গিয়ে ভক্ত মঙ্গতরামজির কাছে ধ্রুপদ শেখার সুযোগ পেলেন। এখানেই হারিবল্লভ মিউজিক কোনফেরেন্স তানপুরা বাজাতে গিয়ে বিষ্ণু দিগম্বরজির শিষ্য বিনায়করাও পটবর্ধান চোখে পড়লেন। সব শুনে বললেন তুমি যা চাইছো সেই গুরু তোমার দেশেই আছেন। তিনি উস্তাদ আব্দুল করিম খাঁ সাহেব শিষ্য গন্ধর্জি। আর সময় নষ্ট না করে এখুনি চলে যাও।
আবার পথ চলা, তবে এপথ আনন্দের পথ, খুঁজে ওয়েব ছন্দ। পথ শেষ হলো ঘরে। গুরু জানো এতকাল ভিমসেনের মতন শিষ্যের অপেখ্যা করছিলেন।
সম্রাট বোস
7890023700