August 15, 2020

Sri Ramakrishna

শ্রী রামকৃষ্ণ ঠাকুরের তিরোধান দিবস

রবিবার ১৫ অগস্ট ১৮৮৬, কাশীপুরে শ্রাবণের শেষ দিনে ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ‘বেশ ভাল’। বৈকুণ্ঠনাথ সান্যাল লিখেছেন, ‘‘আজ ভাতের পায়স খাব’’ শুনে সকলে আশ্বস্ত। কিন্তু ওই দিনেই ঠাকুরের সেই বিখ্যাত উক্তি—‘‘ভিতরে এত ক্ষিধে যে হাঁড়ি হাঁড়ি খিচুড়ি খাই, কিন্তু মহামায়া কিছুই খেতে দিচ্ছেন না।’’

৩য় ভাব থেকে জ্যোতিষ শাস্ত্রে গলার বিচার করে থাকে সেই ৩য় পতি মঙ্গলের অবস্থান ১২ভাবে জন্ম কালীন।

ক্যান্সার রোগ নিয়ে অনেক রকম জ্যোতিষ বিচার প্রচলিত আছে, যেমন চন্দ্র কেতুর জল রাশিতে অবস্থান কিন্তু শ্রী ঠাকুরের কুষ্টিতে তেমন কিছু ছিলোনা। অনেক সময় বৃহস্পতির দুর্বলতা এমন কর্কট রোগের সৃষ্টি করে থাকে।

শেষের সেই দিনে খিচুড়ি নিয়েও বিশেষ গোলযোগ। সেবকদের জন্য শ্রীমা যে খিচুড়ি রাঁধছিলেন, তার নীচের অংশ ধরে গেল।
বিকেলের দিকে পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ায় ভক্ত শশী (পরবর্তী কালে স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ) কয়েক মাইল দৌড়ে গিয়ে ডা. নবীন পালকে ধরে নিয়ে এলেন। ঠাকুর বললেন, ‘‘আজ আমার বেশ কষ্ট হচ্ছে।’ ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘সারবে?’’ ডাক্তার নিরুত্তর।
এক সময় ঠাকুর ভক্তদের বললেন, ‘‘একেই নাভিশ্বাস বলে।’’ ভক্তরা বিশ্বাস করল না। তারা ভাতের মণ্ড নিয়ে এল।

শেষ দিনের গোচর বিচার করলে ঠাকুরের কুষ্টিতে কেতুর দশা এবং শুক্রের অন্তর দশা চলছিলো। সেই কেতু আর শুক্রের অবস্থান ছিলো ৮ভাবে, কন্যা রাশিতে।

৮ম ভাব থেকে আমরা আয়ু, মৃত্যু বিচার করে থাকি। জন্মকালীন এই শুক্রের অবস্থান ছিলো ২য় ভাবে, মারক স্থানে।

আয়ু বিচারের পরিধিতে মহাপুরুষ সাধকের আয়ু পরিমিতির সীমানা সাধকের ইচ্ছাধীন হওয়ায় আমাদের বিচার অধীন নয় বলে তা না করাই ভালো।

সাধারণ মানুষ যেহেতু দেহের ভাঙ্গনের দেহত্যাগ করেন। তাই সাধারণ মানুষের আয়ু বিচার করতে হয়।

তখন প্রায় রাত ন’টা। হঠাৎ ঠাকুরের সমাধি। নরেন সবাইকে ‘হরি ওঁ তৎসৎ’ কীর্তন করতে বললেন। সমাধি ভঙ্গ হল রাত প্রায় এগারোটায়। সেবক শশীর ইংরেজিতে রাখা নোট অনুযায়ী, ‘পুরো এক গ্লাস পায়েস পান করেন।’ তার পর ঠাকুর নাকি বলেন, ‘আঃ শান্তি হল। এখন আর কোনও রোগ নেই।’
স্বামী অভেদানন্দ এবং স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ ঠাকুরের শেষ মুহূর্তের বিস্তারিত বিবরণ রেখে গিয়েছেন—‘‘একটা বাজিলে অকস্মাৎ তিনি একপাশে গড়াইয়া পড়েন। তাঁহার গলায় ঘড়ঘড় শব্দ হইতে থাকে। নরেন তাড়াতাড়ি তাঁহার পা লেপে ঢাকিয়া ছুটিয়া সিঁড়ি বাহিয়া নীচে নামিয়া যান। এ দৃশ্য তিনি সহিতে পারিতেছিলেন না। নাড়ি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, আমরা সকলে ভাবিলাম, উহা সমাধি।’’
সেই রাত্রেই দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরের ভাইপো রামলালকে খবর দেওয়া হল। রামলাল এসে বলল, ‘ব্রহ্মতালু গরম আছে, তোমরা একবার কাপ্তেন উপাধ্যায়কে খবর দাও।’ তিনি তাড়াতা়ড়ি এসে বললেন, মেরুদণ্ডে গব্যঘৃত মালিশ করলে চৈতন্যোদয় হবে। তিন ঘণ্টার বেশি মালিশ করেও কোনও ফল হল না।

১৬ অগস্ট সকালবেলায় ডা. মহেন্দ্রলাল সরকারের কাশীপুরে আবির্ভাব। বৈকুণ্ঠনাথ সান্যালের রচনা অনুযায়ী, পরদিন প্রত্যুষে ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার সর্বপ্রথম উদ্যানে উপস্থিত হন। অভেদানন্দের বর্ণনা অনুযায়ী, ডা. সরকার ‘‘বেলা দশ ঘটিকায় এসে নাড়ি দেখে বলেন, ঠাকুরের প্রাণবায়ু নির্গত হয়েছে।’’ অনেক বিচার-বিবেচনার পর স্বামী প্রভানন্দের মতামত, ‘ডাক্তার সরকার কাশীপুর পৌঁছান বেলা একটায়।’
ডাক্তার সরকারের দিনলিপি, ‘‘খাওয়াদাওয়ার পর প্রথমে ডাফ স্ট্রিটে যাই এক রোগিণীকে দেখতে, তারপর পরমহংসের কাছে। তিনি মৃত। গত রাত্রে একটার সময় তাঁর দেহাবসান হয়েছে, He was lying on the left side legs drawn up, eyes open, mouth partly open,…।’’

রাহু এমন একটা গ্রহ সাধারণ মানুষের কুষ্টিতে যদি ভালো ভাবে অবস্থান করে অথবা সাধারণ মানুষের কুষ্টিকে প্রভাবিত করে তাহলে তাহার জীবনে সুনাম অথবা দুর্নাম দুটোই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে বেশী সময় লাগে না।

শ্রী ঠাকুরের কুষ্টিতে একটা জিনিস লক্ষ্য করার মতন ছিলো।

লগ্ন, রবি, বুধ, শনি, বৃহস্পতি এই তিনটি গ্রহ রাহুর নক্ষত্রে অবস্থান করেছিলো।

শ্রী ঠাকুরের কুষ্টি বিচার করা আমার সাহস বা ক্ষমতা কিছুই নেই, স্বভাবের তাড়নায় একবার আলোচনা করলাম।

আজকের দিনে ভোর রাতে ১টার সময় আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।

সম্রাট বোস
7890023700

Leave a Reply

Show Buttons
Hide Buttons